আমি যদি বলি আপনি
যখন কিশোরী ছিলেন তখন যেই ত্বণ্নি চেহারা ছিল আপনি যখন ত্রিশোর্ধ হবেন তখনও আপনি সেই
একই চেহারায় থাকতে পারেন সে আপনি মোটা চিকন যাই হন না কেন। আমাদের চেহারা আসলে আমাদের
জীবন শৈলীর প্রতিচ্ছবি। কারণ ভেবে দেখুন যখনই আমরা বলি আমার চেহারা পাল্টে গেছে কি
সাধে, আমি কি সেই আগের টেনশন ফ্রি জীবন নিয়ে আছি? আমাদের প্রশ্নের মধ্যেই আমাদের উত্তর।
কিছু কিছু চেহারা খোদার দান সেই সাথে কিছুটা যত্নেরও কারণে ২০/৩০ বছর পরেও একই রকম
রয়ে যায়। মহিলাদের চেহারায় পরিবর্তন হয় বেশি কারণ অতিরিক্ত বয়স লুকাবার চেষ্টা। ওখানেই
ভুল, বয়স বাড়বেই আর একদিন আমাদের চলে যেতে হবে এটাই সত্য। তাই বয়স যাই হোক আপনি সেই
আগের চেহারা নিয়েই থাকার চেষ্টা করুন। না কোনো এন্টি এজিং ক্রীম বা বোটক্স বা মেডিটেশন
বা প্লাস্টিক সার্জারীর প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হলো আপনার জীবনে রুটিনের। না না, মোটেই
হালকা ভাবে নেবেন না। একটু ভেবে দেখুন প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যারা কাজ করেন তারা শারীরিক
ভাবে যেমন সুস্থ থাকেন তেমনি বয়সের তুলনায় অনেক ইয়াং থাকেন। আবার ভেবে দেখুন গ্রামের
মানুষ বিশেষ করে গ্রামের মহিলারা কিন্তু বহু দিন পর্যন্ত যৌবন ধরে রাখতে পারে এমনকি
একাধিক বাচ্চা নেওয়া স্বতেও। না এটা দূষণমুক্ত পরিবেশের কারণে নয় এটি তাদের রুটিন জীবনের
জন্য।
ভেবে দেখুন এরা সকলেই ভোরে ঘুম থেকে উঠেন এবং রাতে ১০টার অধিক প্রয়োজন ছাড়া জাগেন
না। যেহেতু ঘুম থেকে আগে উঠলে ক্ষিধেও আগে লাগে তাই নাশতার সময় ও এগিয়ে আসে। আমরা পুষ্টিকর
খাদ্য আর ব্যায়াম করা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরি কিন্তু মেদ ঝরানো ছাড়াও প্রয়োজন পরিমান ঘুম
যে অত্যাবশ্যক সেটা আমরা একেবারেই ভুলে যাই। ঘুমের মধ্যে অর্থাৎ আমাদের শরীর যখন বিশ্রামে
থাকে তখন আমাদের ব্রেন থেকে শুরু করে ত্বক অবসর পায় পুনরুদ্ধারের। কারণ তখন আমরা যা
যা পুষ্টিকর কিছু সারাদিন গ্রহণ করি তা শরীরের পূর্ণ বিশ্রামের সময় কাজে লাগে। আমাদের
শরীর ঘড়ির মত সময় মেনে চলে জন্ম হতেই। এ জন্য যারা খাওয়া ঘুমের অনিয়ম করেন তারা অল্প
বয়সেই আজকাল হাইপার টেনশন, ডায়াবেটিকস বা লিভার কিডনির রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, ভয়ের
বিষয় মারাও যাচ্ছেন রোগ বুঝে উঠার আগেই। আবার অনেকেই না বুঝে ফুড সাপ্লিমেন্ট খান যেমন
কড লিভার অয়েল, ওমেগা ৩ ক্যাপস বা ক্যালসিয়াম। ডাক্তার পরামর্শ দিলে তবেই খাবেন, শরীরে
ঘাটতি যেমন কাম্য নয় তেমনি প্রয়োজনাতিরিক্ত ভিটামিন মিনারেলও বিপদজনক। আর এসব সাপ্লিমেন্ট
যদি খান ও তাহলেও বিরতি দিয়ে দিয়ে খেতে হয়। অনেকেই ডায়েট করে একগাদা সাপ্লিমেন্ট খান
এবং এক পর্যায় এসবের উপর এমন ভাবে নির্ভরশীল হয়ে যান যে ভুলেই যান যে স্বাভাবিক ভাবেও
বেচে থাকা যায়। সব থেকে ভয়াবহ সমস্যা জীবনের রুটিনে হলো ঘুমের ওষুধের ওপর নির্ভরশীলতা।
এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে এখনকার দিনে যার ঘুমের সমস্যা নেই। বিশেষত মেয়েরা
এমনিতেই চাপা তাই ঘুম না হলে বড় জোর চিরচিরে ব্যবহার করে কিন্তু সমস্যা বলে না। সমস্যা
দীর্ঘস্থায়ী হলে আস্তে আস্তে সেটি ইনসমনিয়ার রূপ নেয় তাদের অজান্তে। তখন আর কোন ঘুমের
ওষুধ কাজে দেয় না। রাত জেগে তখন টিভি দেখা, গান শোনা, ভোর পর্যন্ত ফেসবুকিং বা হঠাত
ইয়োগা ক্লাসে যাওয়ার ধুম উঠে। সমস্যা থাকলে সমাধানও আছে। যখনই ঘুমের সমস্যা হয় আগে
ভাগেই ব্যবস্থা নিন, বেশিদিন অপেক্ষা করবেন না।
আমাদের চেহারার বলি রেখা
আসার ভয় সম্ভবত সব চেয়ে বেশি। কিন্তু একেও দেরী করানো যায়, কিন্তু এড়ানো যায় না। চেহারায়
বলি রেখা দেরীতে আসবে যদি আপনার শরীরে যথেষ্ট পরিমান ময়েশ্চারাইযার থাকে। বয়সের সাথে
সাথে ত্বকের পরিবর্তন হয় যেটা আমাদের মত গরমের দেশে সহজে ধরা পরে না। বাতাসে আদ্রতার কারণে আমরা ঘামাই প্রচুর কিন্তু সেই কারণে মনে হয় ত্বক তৈলাক্ত কিন্তু আসলে তা না, আমরা যেটা দীর্ঘ
সময় এয়ার কন্ডিশনে থাকলে টের পাই। আমাদের বেশির ভাগ মিশ্র ত্বকের অধিকারী আর মিশ্র ত্বকের সমস্যা বেশী হয় কারণ টি-জোন
ঘামে আবার অন্য দিকে আদ্রতার কারণে চেহারা কিছুক্ষণের জন্য ঘেমে যায় তাই মনে হয় পুরো
চেহারাই বোধয় তৈলাক্ত। আসলে তা নয় আস্তে আস্তে ত্বকের স্বাভাবিক আদ্রতা কমতে থাকে।
আমাদের চলাফেরা সব সময় হয় খুব গরম নয়তো এসির ঠান্ডায় তাই আমাদের বুঝতে দেরী হয়। এই
ক্ষেত্রে যা করা উচিত দিনে দুই তিনবার অন্তত মুখ ধোয়া উচিত তাহলে পরিষ্কারও থাকা হবে
আর সেই সাথে ত্বকের আসল চেহারাটাও ধরা যাবে। যারা আউট ডোর বেশি থাকেন তারা বেশি করে
পানি খাবেন। যারা কর্পোরেট তারা টেবিলে একটা পানির বোতল রাখতে পারেন এবং অবশ্যই বাথরুম
চেপে রাখবেন না। আমার জানা মতে অন্তত ৬০% কর্পোরেটের এই বদভ্যাসটা আছে বিশেষ করে মেয়েদের।
এটি ভবিষ্যতে যেয়ে বিভিন্ন ধরনের গাইনি সমস্যার জন্ম দেয় কাজেই এই অভ্যাস ত্যাগ করুন।
মনে রাখবেন পেট পরিষ্কার
তো চেহারাতেও সমস্যা কম হবে। এই
জন্য খাবারে কিছুটা আশযুক্ত
খাবার রাখুন। বিশেষ
করে সকালের নাস্তায় পারলে
লাল আটার রুটি খান
নয়তো অরিজিনাল কর্নফ্লেক্স অথবা ওটমিল খান। যদি
কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যা থাকে রাতে
ইসবগুল ভিজিয়ে সকালে খেয়ে
নিতে পারেন। চা কফির অভ্যাস কমান। সব
থেকে জরুরী, অনেকেই রাতে
মুখের মেকাপ তুলতে অলসতা
দেখান। এই
বদভ্যাস আজই পরিহার করুন
যদি আরো কিছুদিন সুন্দর
চেহারা নিয়ে থাকতে চান।
শেষ কথা আমাদের জীবনে
মানুষের সাথে সম্পর্ক আমাদের
চেহারায় একটা বিশাল ভূমিকা
রাখে। কিভাবে?
ধরুন আপনার সাথে আপনার
বয়ফ্রেন্ডের সম্পর্কের টানপোরণ চলছে আর আপনি
কেদে চলছেন রাতভর, কারো
সাথে কথা বলছেন না,
ঠিক মত খাচ্ছেন না,
ঘুমতো জানালা দিয়ে পালিয়ে
গেছে, হয়ত এক সপ্তাহ
আপনার এভাবেই গেল তারপর
বন্ধুরা টেনেহিচড়ে আপনাকে বাইরে নিয়ে
এলো স্বাভাবিক জীবনে যদি আপনার
বন্ধু ভাগ্য ভালো হয়। নইলে
পরের এক মাস কেন
এক বছরও আপনি দুঃখের
গান শুনেই কোনো মতে
স্বাভাবিক হবার চেষ্টা চালিয়ে
যাবেন। আয়নায়
নিজের চেহারা দেখার কথাতো
ভুলেই যাবেন। ওই
এক সপ্তাহ পর একবার
নিজের চেহারার দিকে নজর দিয়েন
তাহলেই জবাব পেয়ে যাবেন। স্বাভাবিক
থাকার চেষ্টা করুন।
আবেগকে জীবনের রিমোট কন্ট্রোল
দিয়ে দেবেন না।
আমরা বাঙ্গালীরা বড়ই আবেগপ্রবন বিশেষ
করে মেয়েরা। যত
যাই হোক মনে রাখবেন পা পিছলে পড়লেও উঠে দাড়ানো
যায়। কাজেই হাল ছাড়বেন না। মনে দুঃখ থাকলে তা বেশিক্ষণ মনে চেপে রাখবেন না যত তাড়াতাড়ি
পারেন ঝেড়ে ফেলুন। মনে রাখবেন কারো জন্য কারো জীবন ঠেকে থাকে না। যা সমস্যা হয় সমাধান
থাকেই কাজেই আপসেট হবেন না কারণ এতে আপনার শরীর মন দুইতেই প্রভাব ফেলে। যতটা পারবেন
খুশি থাকার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন প্রফুল্ল মন চেহারায় যৌবনের ছাপ ফেলে। কাজেই মুখের
হাসি ধরে রাখুন। যা আপনার মনকে খুশি রাখে তাই করুন। বই পড়ুন, সিনেমা দেখুন, বন্ধুর
সাথে আড্ডা দিন, শর্ট ট্রিপ দিন। কিছু মানুষ যারা
ভাবেন আমি খারাপ আছি তো সামনে যে আছে তাকে কিভাবে ভালো থাকতে দেই। আর বিশ্বাস করুন
আর নাই করুন, এমন মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এরা কারো ভালো বরদাস্তই করতে
পারে না। কিন্তু আপনার খুশি আপনার হাতে আপনাকে বড় জোর মানুষ বিরক্ত করতে পারবে কিন্তু
আপনি পসিটিভ থাকলে কেউ আপনাকে চাইলেই দুঃখ দিতে পারবে না। টেনশন কম করুন। আজকের দিন
কে গুরুত্ব দিন, আগামী কাল কি হবে ভেবে ভেবে মাথার চুল পাকানোর প্রয়োজন নেই।
জীবনের যাত্রায়
খাওয়া পড়া ঘুমে রুটিনকে প্রাধান্য দিন। দেখবেন অনেক কিছুই সহজ হয়ে গেছে। জীবন মানেই
যুদ্ধ। মনে রাখতে হবে পৃথিবীতে আমরা শাস্তি হিসাবেই আসি তাই জীবনকে গোলাপের বিছানা
ভাবলে ভুল হবে। পয়সা থাকলেই সে সুখী আর আমার একটু কম আছে তাই আমাকে মুখ ভার করে থাকতে
হবে এমন চিন্তা ভাবনা মন থেকে বের করে দিন। দিনে অন্তত ২ বার ভালো কিছু ভাবুন। জীবনে
কোন কিছু চলে গেলে আফসোস থাকেই কিন্তু তা সারাজীবন বুকে বয়ে বেড়াবার কোন কারণ নেই।
নিজেকে আগে নিজে সাহায্য করুন তারপর অন্যের কথা ভাবুন। চোখের কোলে কালি পরতে না দিতে
চাইলে এটিই উত্কৃষ্ট উপায়। চোখকে সাজাতে হবে শুধু কাজলে, কালিতে নয়।
আজ এই পর্যন্তই।
Love
Jessica
No comments:
Post a Comment