এটি এমন একটি বিষয় নিয়ে যা অনেকদিন থেকেই অপেক্ষা করছিলাম কথা বলার জন্য। আমাদের দেশের প্রথম স্যানিটারি ন্যাপকিন সেনোরা। এরপর ধীরে ধীরে আসে মোনালিসা, ফ্রিডম, জয়া এবং ইভানা। আমরা আসলে এত বেশি বিদেশী জিনিস পাই দেশীগুলোর দিকে তাকানোরও সুযোগ হয় না। আবার অনেকে চেষ্টা করার বিপত্তিতেও যেতে চান না। হঠাৎ গতকাল প্রেসকিপশন পয়েন্টে ঢুকে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে যেয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া জয়া স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেটটি চোখে পরলো। ফ্রিডম আর সেনোরাও ছিলো কিন্তু এই দুটির একটি প্রধান সমস্যা এদের আঠা এতই শক্তিশালী যে ব্যবহারের পর প্যান্টিতে আঠা রয়ে যেয়ে প্যান্টি নষ্ট করে ফেলে তাই ওগুলো কেনা বাদ দিয়েছি। জয়া আগে কখনো চোখে পরেনি তাই একটি তুলে নিলাম। বাসায় এসে ব্যবহার করে আমার নিজের যা মতামত তা হলো এটি যদি কিছু কিছু জায়গায় আরেকটু উন্নত করা যায় অনায়াসে এটি বিদেশী স্যানিটারি ন্যাপকিনের জায়গা দখল করে নিতে পারবে।
১. এটির অপরের অংশ খুবই আরামদায়ক। মোটেই প্লাস্টিকের মত মনে হয়না যেমনটা হুইসপারে হয়। অনেকেই অভিযোগ করেছেন হুইসপার আল্ট্রাতে রীতিমত চামড়া ছিলে যায় দীর্ঘক্ষণ পরিধানে। আবার হুইস্পারের উপরের অংশ প্লাস্টিকের মত আবরণের জন্য বাতাস আটকে থাকে তাই দুর্গন্ধের উত্পত্তি হয় যা খুবই অসুবিধাজনক এবং খুবই অস্বাস্থকর। এই সব অভিযোগের পর হুইসপার বাজারে "অনিয়ন" নামের নতুন কটন আবরণের স্যানিটারি ন্যাপকিন এনেছে আরো কিছুটা মূল্য বৃদ্ধি করে।
২. এটি যেকারো ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে। দাম মাত্র ৬০ টাকা যেখানে বিদেশী যেকোনো ব্র্যান্ডের ৮টি প্যাড আমরা সর্বনিম্ন ১২০ টাকা দিয়ে কিনি। জাপানী বা কোরিয়ানগুলোর দাম আকাশ ছোয়া।
৩. এতে একটি হালকা সুগন্ধ দেওয়া আছে যা ৯০% সহজলভ্য কোনো স্যানিটারি ন্যাপকিনেই থাকে না। আমি সম্ভবত একমাত্র ইউএফটি নামক একটি দুষ্প্রাপ্প জাপানী ব্র্যান্ডের স্যানিটারি ন্যাপকিনে পেয়েছিলাম যার দাম দিয়ে আমি অন্তত ৬টি জয়া স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে পারতাম।
যেই জিনিসগুলোতে এটির কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন তা হল -
১. প্যাকেজিংটা আরেকটু উন্নত করা যাতে সবার নজরে আসে।
২. আমার চোখে এটির একটি সাইজই চোখে পরেছে। অন্তত ৩ রকম সাইজ রাখা উচিত।
৩. এতে বারতি প্লাস্টিক অর্থাৎ যেটি দিয়ে মুড়িয়ে ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হয় সেটি নেই তাই এটি সংযোজন অত্যাবশ্যক। এতে যদি মূল্য সামান্য বাড়ে তাতে ক্ষতি নেই।
একজন সুস্থ স্বাভাবিক নারীর মাসিক হওয়া প্রতি মাসের ব্যাপার তাই স্যানিটারি ন্যাপকিন অধিক মূল্যে কিনে তারপর তা নিয়ে ভোগান্তির আমি কোন অর্থ খুঁজে পাই না। আর হাতের কাছে যদি কম মূল্যে একই জিনিস পাওয়া যায় তাহলে কেন ৫/৬ গুন খরচ করে বাজে জিনিস ব্যবহার করতে হবে? কারণ জিনিসটিতো শেষ পর্যন্ত ময়লার বালতিতেই যাবে তাই ব্যাগে টাকা থাকলেই দামীটা নিতে হবে কি? কারণ স্যতিই যদি একটু ভেবে দেখি আসলে এই প্যাকেজিংটাও আসলে স্রেফ পাঁচ দিনের ব্যাপার, প্যাকেট খোলার পর সেটার দিকে ভুলেও কেউ দ্বিতীয়বার তাকিয়ে দেখে না। আর এটাই আসল সত্য। তাহলে কি সিদ্ধান্তে আসা যায়?
আমাদের দেশে এসব বিষয়ে খোলামেলা কথা বলার পরিবেশ নেই বা উদ্যোগ নেওয়া হয়না বলেই রোজকার জিনিসের মত স্যানিটারি ন্যাপকিনও যে একটা স্বাভাবিক জিনিস এটারও উন্নতির প্রয়োজন আছে সেই কথা কেউ মুখেও আনতে চায় না। পাছে লোকে কিছু বলে। বড় বড় ডিগ্রীধারীরা কবে বুঝবেন জানা নেই যে এটিও আলু পটলের মত নিত্যকার জিনিস।এটি নিয়ে ভাবলে ভালো বৈ খারাপ হবে না।