আমরা বাঙালিরা সাংঘাতিক মহান। মেয়েরাতো আরো বেশি মহান। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় আছে যা মহানুভবতা নয় বরং বোকামি বলা যায়। তার মধ্যে একটি হলো তালাকের পর সন্তানের জন্য বা ভয়ের জন্য সারাজীবন একা কাটানো। একটি মেয়ে অনেক আশা নিয়ে বিয়ে করে, তাদের কাছে বিয়েটা একটা নোবেল প্রাইজের চাইতে কম কিছু নয়। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে অনেক বিষয়ে অমিলের কারণে মেয়েদের বাধ্য হয়ে তালাকের রাস্তা নিতে হয়। প্রথমেই বলে নেই আমাদের সামাজিক অবস্থা মেয়েদের দাবিয়ে রেখেছে ১০০ বছরের উপরে কাজেই এমনটা আশা করবেন না যে হঠাৎ করে আপনার জন্য কেউ জাদুর ছড়ি ঘুরিয়ে সব বদলে দেবে। কিন্তু অবস্থা যাই থাকুক দ্বিতীয়বার জীবনকে শুরু করার সুযোগ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না। কেন? কারণ আপনি যতক্ষন জীবিত থাকবেন আপনার জীবনের চাওয়া, আশা, আকাংখাগুলোও স্বাভাবিক মানুষের মতই থাকবে আর এই সত্য আপনার পক্ষে এড়ানো অসম্ভব। তাই সত্যকে মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। পেটে খিদে মুখে লাজের যুগ চলে গেছে বহু আগে, কাজেই পুরনোকে ঝেড়ে ফেলে হেল্প ইয়োর সেল্ফ। তালাকের পরে কতগুলো বিষয় খুব গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত যাতে পরবর্তীতে বিয়ের জন্য আপনি নিশ্চিন্তে এগোতে পারবেন। । যেমন -
১. আর্থিক সচ্ছলতা : আপনি যদি ভালো করে খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন আমাদের সমাজে এখনো ছেলে সন্তানের মূল্যই বেশি কাজেই আপনার বাবা যদি সচ্ছল ব্যক্তিও হন বা মেয়ের প্রতি প্রচুর ভালোবাসাও থাকে তাহলেও এই সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে আপনি যদি একা হন তাহলে উনি চাইলেও আপনাকে সামাজিক চিন্তাধারার কারণে সমান সমান দিতে পারেন না বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। মেয়েরা যতই শিক্ষিত হোকনা কেন তালাকপ্রাপ্তা হলে বাড়িতে এবং বাইরে সবাই এখনো বোঝাই মনে করে। সেটা আপনি সবার সুক্ষ আচরণে টের পেয়ে যাবেন। হাতের পাঁচ আঙ্গুল সমান হয় না তাই অনেক বাবা সাহস করে কন্যার ভবিষ্যত ভেবে সমান সমান দিয়ে দেন। এক্ষেত্রে আপনার আর্থিক সচ্ছলতা খুবই জরুরী কারণ আপনি যদি আপনার ভূতপূর্ব স্বামী থেকে খরচ আদায় করতে চান তাহলেও আপনাকে লড়তে হবে এবং সেই লড়াই করতেও আপনার আর্থিক সংগতির প্রয়োজন হবে। সম্পত্তির বিষয়ে প্রয়োজনে আইনী সহযোগিতা নিন। আপনি নিজে যদি কামাই না করেন তাহলে এটাই শ্রেষ্ঠ সময় নিজের পায়ে দাড়ানোর। সব সময় নিজের পায়ে দাড়ানোর জন্য এমবিএ লাগেনা। আপনার ইচ্ছাই যথেষ্ট। আপনি আর্থিক ভাবে যদি সচ্ছল থাকেন তাহলে অনেক কিছুই আপনার জীবনে সহজ হয়ে যাবে।
২. সন্তান : আমাদের দেশে ৯৫% মায়েরা আসার সময় সন্তান নিয়ে চলে আসেন কারণ তারা ভাবেন আদরের সন্তানের সঠিক যত্ন নেওয়া হবেনা। আপনি ভুলে যাচ্ছেন এই ঔরসজাত সন্তান আপনার ভূতপূর্ব স্বামীরই কাজেই কিছু অধিকার তারও আছে। সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি এসে পরলাম আর সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল এটি ভাবাটাই সব চেয়ে বড় ভুল কারণ আমাদের সমাজ একটি মেয়েকে বিয়ে দিয়ে মনে করে ওখানেই দায়িত্ব শেষ। তালাকের পরে একটি মেয়ের অবস্থা যা দাড়ায় তা হলো আপনার নিজের অধিকার আদায়ের যুদ্ধ, মানসিক একটা আঘাত কাটিয়ে ওঠা, নিজের বাবার বাড়ির সাথে এখন নতুন করে সম্পর্ক গড়া, আত্মীয় বন্ধুদের উত্তর দেওয়া তার ওপর যদি একটি বা দুটি বাচ্চার দায়িত্ব আপনি সয়ং নেন তাহলে আপনার নিজের কথা ভাবার সময় সারাদিনে দুই সেকেন্ডও পাবেন না। ভুলে যাবেন না এই পৃথিবীতে সবাই এক বারই আসে এবং এক বারই চলে যাবে। কাজেই জীবন যদি ঠিক করার সুযোগ থাকে অবশ্যই সেই সুযোগের ব্যবহার করুন। সন্তান সন্তানের জায়গায়, সেই জন্য বিয়ে না করার কোনো কারণ নেই। একটি কথা মনে রাখবেন, কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকেনা। আপনার সন্তান যদি টিনেজার বা আরেকটু বড় হয় তাহলে প্রথম হয়তো রাগারাগি করবে তারপর আপনাকে অপরাধবোধে ভোগানোর চেষ্টা করবে, অনেক তর্ক করবে, মনে কষ্ট দিয়ে কথা বলবে কিন্তু মনে রাখবেন সন্ন্তানরা হঠাৎ পরিবর্তনে একটু ঘাবড়ে যায় মনে করে ভালবাসা ভাগ হয়ে যাবে। জীবনের একটা পর্যায় যখন তারা তাদের ব্যবহার যে ভুল ছিল এটি বুঝতে পারে কালের বিবর্তনে, তখন আপনার জন্য অনেক দেরী হয়ে যাবে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মায়েরা এই সমস্যার কারণে বিয়ে করেননা। মনে রাখবেন এই সমস্যার মোকাবেলা করার একমাত্র রাস্তা, খোলা মনে সত্যি শেঅর করা। এটি আপনার সন্তানকেও ভবিষ্যতে আপনার সাথে সব কিছু খোলা মনে শেঅর করার রাস্তা খুলে দেবে।
৩. বন্ধু : মানুষ সামাজিক জীব। মেয়ে মানুষও একটা মানুষই। বাঙালি মেয়েদের সব চেয়ে বড় সমস্যা সহজ হতে না পারা। আপনার এই মুহুর্তে সঙ্গী দরকার অন্যদের চেয়ে বেশি। নিজেকে একদম গুটিয়ে নেবেন না। আপনার বয়স যদি কমও হয় অথবা সন্তানও থাকে তারপরও দেরী করবেন না দ্রুত বিয়ে করুন। আপনি চাকুরিজীবি হলে ভালো, না হলে পুরনো বন্ধুদের মাঝে ফিরে যান। বন্ধু বানান, হাসি খুশি থাকুন সমাজের ত্যারা দৃষ্টিকে পাত্তা দেবেন না কারণ সমাজ আপনার দুঃক্ষে যেমন সহানুভূতিশীল হয়নি তেমন আপনার ভবিষ্যত নিয়েও তার কিছু আসবে যাবে না।
৪. সব পুরুষ এক রকম নয় : একবার ধাক্কা খাওয়ার পর বিশ্বাসে চিড় ধরা খুবই স্বাভাবিক কিন্তু পজিটিভ থাকুন। মনের জানালা খোলা রাখুন। বিবাহ আপনার মানসিক এবং শারীরিক দুইয়ের জন্যই প্রয়োজন। অনেকেই তালাকের পর এত বেশি ভয় পেয়ে যান যে আর কেউকে বিশ্বাস করতে পারেন না আবার অনেকে বন্দী জীবন থেকে একটু নিঃস্বাস নিতে কিছুদিন একা থেকে প্রেম করে বেড়াতে চান পরে সিরিইয়াসলি বিয়ের কথা ভাবতে গেলে আর ছেলে খুঁজে পান না। এর কারণ এই মধ্যবর্তী সময়ের একা থাকা বা প্রেম করা নিয়ে আপনি বেশি ব্যস্ত ছিলেন যে ভুলে গিয়েছিলেন ওটা বাস্তব নয়। ছেলেরা দশ ফুলে মধু খেয়েও শ্রেষ্ট ফুলটাকেই বেছে বিয়ে করে সেটা প্রথমই হোক আর চতুর্থ বিয়েই হোক, তাই তাদের জন্য এটি সমস্যা নয়। আপনার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার খাটে ১০০%, যাচাই বাছাই করার অধিকার আপনারও আছে।তাই পরবর্তীতে যাকে বেছে নেবেন কিছু সময় দিন, কিন্তু মান মর্যাদার দিকে লক্ষ্য রেখে। যদি বুঝতে পারেন বিষয়টি বিয়ে পর্যন্ত এগোবে না, সরে আসুন দ্রুত। কখনই ১ মাসের বেশি সময় নেবেন না যখন কেউকে বিয়ের জন্য বুঝার চেষ্টা করবেন। কারণ হয়ত আপনি এদিকে সময় অপচয় করলেন খামাখা আর ওই দিকে আপনাকে নিয়ে হয়তো কেউ লং টার্মের প্ল্যান করছিল সেটা হাতছাড়া হয়ে যাবে। সঙ্গী বাছার সময় তার বাঃজ্যিক দিকের সাথে তার স্বভাবের দিকে সুক্ষ নজর রাখুন। কারণ মানুষ বেশিদিন অন্য মানুষ সেজে থাকতে পারবে না।
৫. অভিভাবককে জানানো : বেশিরভাগ মেয়েরা দ্বিতীয় বিয়ে করার বিষয়েই মুখ ফুটে বলতে পারেন না আর পছন্দ অপছন্দ শেষ মুহুর্তে জানান। এই ভুল করবেন না। আপনার কথা গুরুত্ব নিয়ে শুনবে এমন কেউকে শীঘ্র পাত্র দেখতে বলুন এবং তাকে দিয়েই অভিভাবককে বিষয়টি জানান যেন তারা পরবর্তিতে সারপ্রাইজ না হন। কারো সাথে পরিচিত হলে বন্ধুত্ব আগাতে থাকলে অভিভাবককে সরাসরি বা অন্য ভাবে জানান দিন। দিন বদলে গেছে, আজ কাল অভিভাবকরা বিয়েশাদিতে পছন্দ করার ঝামেলায় জড়াতে চান না। এটি একটি নিয়ম মাত্র কিন্তু সুবিধা এই যে আপনি জানিয়ে দিচ্ছেন আপনি দ্বিতীয় বিয়েতে অনিচ্ছুক নন।
৬. বয়স এবং নিজের যত্ন : অনেকেই ভাবেন ৪০ পেরিয়ে গেছি ছেলে কলেজে পড়ে মেয়ে স্কুলে পড়ে আমার এখন তাদের বিয়ের সময় আসছে আমি এখন বাতিলের খাতায়। ভুলে যান, দুনিয়াতে একা এসেছেন একা চলে যেতে হবে। আপনার জীবনের চাওয়া পাওয়া আপনারই দেখতে হবে তাই নিজের বয়সের কথা ভেবে পিছিয়ে যাবেন না কারণ একটা পর্যায় আপনার একা হয়ে যেতেই হবে। আর নিজের শারীরিক এবং বাঃয্যিক যত্নও আপনাকেই নিতে হবে। হোক সেটা সিঙ্গেল বা ডবল থাকা অবস্থায়।
৭. আত্মনির্ভরশীলতা : ভুলে যান ছেলের বউ আপনাকে ভবিষ্যতে দেখবে বা মেয়ের জামাই ছেলের মত। বাবা মাও সারা জীবন কারো থাকেনা তাই সত্যিকার বিপদে পড়লে সহজে কেউকে পাবেন না। তাই একদম পরনির্ভরশীল হবেন না।
শেষ কথা মেয়েদের নিজেদের ভবিষ্যত নিজেদেরই ভাবতে হবে। কখনই দ্বিতীয় বিয়ের জন্য খুব বেশি সময় নেওয়া উচিত নয়, আপনি সময় নিন কিন্তু লং ব্রেক নয়। কাজেই নিজের ভবিষ্যত নিয়ে এখনই ভাবুন সময় থাকতেই। ভালো থাকুন পসিটিভ থাকুন। Life is a Miracle my friend :)
Love
Jessica
No comments:
Post a Comment